দা‘য়ীর প্রশিক্ষণ
দা‘য়ী নিজের প্রশিক্ষণের ফিকির করবে। শুধু মৌখিক দাওয়াতেই প্রভাবিত হবে না। এর সাথে থাকতে হবে আমলের শক্তি। এক্ষেত্রে দা‘য়ীকে কুরআন ও সীরাতের শরণাপন্ন হতে হবে। তার বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিণ উভয় দিক সীরাতের নমুনা বানাতে হবে। এইক্ষেত্রে কয়েকটি কথা খুবই গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে। একজন সাধারণ মানুষও যদি সীমিত ভাবে সীরাতের অধ্যয়ন করে, তাহলে সেও একথা অনুভব করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَإِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ
আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। -সুরা ক্বলাম-৪
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কয়েকটি স্বভাবের কথা সারা আরবে ছড়িয়ে পড়ে ছিল। বিশেষ করে দুটি গুণ, তা হলো, সততা আর আমানত। এই গুণ দুটি এমন ভাবে তাদের মধ্যে প্রকাশ হয়ে ছিল, তারা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামের পরিবর্তে সেই গুণ হিসেবে, সাদিকুল আমিন বলে ডাকতো। কাবাঘর নির্মাণের সময়, হাজরে আসওয়াদ উঠানো নিয়ে সে সিদ্ধান্ত হলো, পর দিন সকালে যখন লোকজন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সর্ব প্রথম দেখল, সকলেই বলে উঠলো, আমানতদার সত্যবাদী এসে গেছেন। আমরা তার উপর সন্তুষ্ট।
আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর এই দুইটি গুণের ভিতর অনেক হেকমত লুকিয়ে ছিল। সততা আর আমানতদারী যার মধ্যে থাকে সে কঠিন থেকে কঠিন হৃদয়ের মধ্যেও ঠাঁই করে নিতে পারে। তার কথা খুব গুরুত্বের সাথে মানে ও শুনে। এই জন্য সীরাতে নববীর আনুগত্য প্রত্যেক দা‘য়ীর জন্য খুবই জরুরী। সেই গুণগুলো নিজের মধ্যে ফিট করতে হবে। যা নবীজীর মধ্যে ছিল। এ ছাড়া দাওয়াতের মধ্যে কোনো প্রভাব সৃষ্টি হবে না।
সততার ব্যাপারে মৌখিক সততার সাথে সাথে ওয়াদা পূরণের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কথা কাজে মিল থাকতে হবে। এ ব্যাপারে সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ রহ. এর এক মুরিদের ঘটনা বর্ণনা করছি।
হযরত সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ রহ. এর এক মুরিদ সাহারানপুরে থাকতেন। একদিন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। খাদেমগণ হাকিম আনার পরামর্শ করছেন। তিনি বললেন, আমি মুখাপেক্ষি, তাই আমাকে যেতে হবে। তিনি পায়ে হেঁটে চললেন, বেশী দুর্বলতার কারণে সাথে একটি চেয়ার নিয়ে নিলেন। কিছুদূর হেঁটে যান আর কিছু সময় চেয়ারে বসে বিশ্্রাম করেন। এভাবে হাকিম সাহেবের বাড়িতে পৌঁছলেন। হাকিম ছিল বেদাতি। তাই সে সালাতে গাওছিয়া পড়ছিল। এই অবস্থা দেখে চিকিৎসা না করিয়েই বাড়িতে ফিরলেন। খাদেম জিজ্ঞাসা করলÑ হযরত! আপনিতো তার কাছ থেকে দ্বীনি কিছু নেয়ার জন্য যান নি? তিনি বললেন, আমি প্রতিদিন বেতেরের নামাযে কোন মুখ দিয়ে এ কথা বলব “ওয়া নাতরুকু মাইয়াফজুরুকা” যারা আপনার নাফরমানী করে তাদেরকে ছেড়ে দিব। মোট কথা সর্বপ্রকার সততাকে নিজের আমলের মধ্যে পেশ করতে হবে।
সততা আর আমানতদারী ছাড়াও অন্যের কল্যাণকামিতা ইত্যাদি অনেক গুণাবলী সীরাতের অধ্যয়নের মাধ্যমে শিখতে পারবে। যে গুলো দা‘য়ীর জন্য খুবই জরুরী। কঠিন অবস্থাতেও দুশমনদের জন্য দুআ ও তাদের জন্য কল্যাণ কামনা করা যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত। এটা প্রত্যেক দা‘য়ীর মাঝে থাকা উচিত।
মূল. হযরত মাওলানা কালিম সিদ্দিকী দা.বা.
অনুবাদ. যুবায়ের আহমদ
Copyright © 2017 - Jubaerahmad.com - All Rights Reserved