দা‘য়ী না হলে মাদউ হতে হয়
এটাও সুস্পষ্ট বাস্তবতা, জাতি যখন দা‘য়ী না হবে তখন মাদ‘উ হবে। এমন কি লেখকের সামনেও এমন লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে। গুজরাটের সফরের সময় স্থানীয় একজন বড় মুবাল্লিগ বলছিলেন, যে বুম্বাই থেকে একটি আন্দোলন শুরু হয়েছে। তাদের দাওয়াতের ভিত্তি হল একত্ববাদ। এটাকে পান্ডুর আন্দল বলা হয়। তাদের কর্মীগণ জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন আশ্রম তৈরি করে। রাত দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে। এই কর্মীদেরকে বলা হয় পান্ডে। সেই মুবাল্লিগ সাহেব বললেন, একদিন তাদের একজন কর্মী আমার কাছে এসে কিছু সময় চাইল, বলল আমি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। আমি তার সাথে কথা বলার জন্য বসে গেলাম। সে কথা শুরু করলÑ এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্য হল এই, এই দুনিয়ার মালিক পালনকর্তা একজন। তাঁর শক্তি হল অপার। তিনি সব কিছু শুনেন, তিনি সকলকে জীবিত করেন, মৃত্যু দান করেন। পুরো পৃথিবীর পরিচালক ও প্রতিপালক তিনি একজনই। দুনিয়ার সকল মানুষ মাত্রই শক্তির পূজা করে। তাহলে এই ঝগড়া ফাসাদ সব শেষ হয়ে যাবে। ঝগড়া তো এই জন্যইÑ প্রত্যেকে মিথ্যা ভগবান রেখেছে। তিনি তো এমন যিনি আসমান যমিনের স্রষ্টা। তিনি সাধারণ বীজ থেকে বড় বড় বৃক্ষ ও রকমারি ফল ও ফুল বের করেন।
আমি অবাক হলাম, যে একজন অমুসলিম আমাকে একত্ববাদের দাওয়াত দিচ্ছে। আমার আশ্চর্যের অন্ত রইল না, যখন সে বলল, তাঁর বড়ত্বের কত নিদর্শন রয়েছে। তিনি গোবর আর রক্তের মধ্যেখান থেকে কত সুন্দর পরিষ্কার দুধ বের করেন।
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি কুরআন শরিফ পড়েছেন? উত্তর দিল, মানুষ আমাদেরকে অস্পর্শ্য মনে করে। এই জন্য এসব জিনিস আমাদেরকে দেয় না। আমি তো অস্থির থাকি কেউ যদি আমাকে কুরআন পড়তে দেয়। কিন্তু কেউ দেয় না।
চিন্তা করুন, কুরআন শরীফ ছাড়া অন্য কোনো আসমানী গ্রন্থে একত্ববাদের পক্ষে আল্লাহর বড়ত্ব ও সৃষ্টিকে প্রমাণিত করার জন্য এ ধরনের উদাহরণ বর্ণনা করা হয়নি। এটা তো শুধু কুরআনের অলৌকিকতা, যা একজন অমুসলিমের মুখ থেকে বের হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেনÑ
وَاِنَّ لَـكُمْ فِى الْاَنْعَامِ لَعِبْرَةً نُسْقِيْكُمْ مِّمَّا فِىْ بُطُوْنِه مِنْ بَيْنِ فَرْثٍ وَّدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَائِغًا لِّلشّٰرِبِيْنَ
অর্থ : নিশ্চয় চতুষ্পদ জন্তুদের মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় আছে। তাদের পেটের মধ্যে যে মল ও রক্তের মধ্য হতে খাঁটি দুধ আমি তোমাদের পান করাই, আর পানকারীদের জন্য সেটা হল তৃপ্তিকর।
-সূরা নাহল-৬৬
এর থেকে আর আশ্চর্যের কথা কি হতে পারে, যে আমরা মানবতাকে কুফর ও শিরক থেকে বের করা এবং মানুষকে একত্ববাদের দাওয়াত দেয়ার দায়িত্বকে ছেড়ে দিয়েছি। আর আমরা আমাদের প্রিয় নবীকে পাঠানোর উদ্দেশ্যেÑ
هُوَالَّذِىْ بَعَثَ فِى الْاُمِّيِّيْنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيٰتِه وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِىْ ضَلٰلٍ مُّبِيْنَ
অর্থ: তিনিই উম্মীদের মধ্যে একজন রাসূল পাঠাইয়াছেন তাহাদের মধ্যে হইতে, যে তাহাদের নিকট আবৃত্তি করে তাঁহার আয়াতসমূহ; তাহাদিগকে পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমত; ইতিপূর্বে তো ইহারা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে। -সূরা জুমা-২
এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। কাগজে লেখা কুরআন থেকে না নিজে উপকৃত হলাম, না অন্যকে তা থেকে উপকৃত করা হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা এই কাগজের ছহিফা ছাড়াও কুরআনের জ্ঞানকে অন্যের অন্তরে ঢেলে দেন। এবং তার দ্বারা মুসলিম জাতিকে দাওয়াত প্রদান করাচ্ছেন। এর কারণ আল্লাহ তাআলা তাওহিদকে সকল ধর্মের উপর বিজয়ী করে রাখবেন।
هُوَ الَّذِىْ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰى وَدِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهٗ عَلَى الدِّيْنِ كُلِّه وَكَفٰى بِاللهِ شَهِيْدًا
অর্থ : তিনিই তাঁহার রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করিয়াছেন, অপর সমস্ত দ্বীনের উপর উহাকে জয়যুক্ত করিবার জন্য। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।
পথ শুধু একটি
এই জন্য শুধু নিজ পূর্বসূরীদের মান-মর্যাদা, শান শওকত এমনকি পুরো দুনিয়ার উপর প্রভাব অর্জনের জন্য এই জাতিকে তার দাওয়াতি দায়িত্ব আদায় করতে হবে। এবং দাতা হয়ে দাওয়াতি মর্যাদার হক আদায় করতে হবে। অন্যথায় অনৈসলামী চিন্তার মাদউ হয়ে বাতিলের খড়কুটো হয়ে ভেসে চলে যেতে হবে। এবং অমুসলিমদের প্রভাবে প্রভাবিত হতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।
মূর্তিও কখনো হেদায়েতের মাধ্যম হয়ে যায়
ইতিহাস সাক্ষী তিনি যখন কাজ নিতে চান, তখন পাথর জীব-জন্তু মশা মাছি দ্বারাও কাজ নেন। হেদায়াত তো ব্যাপক হবেই। আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব ও অবস্থান না বুঝি তাহলে আল্লাহ অন্য মানুষকে এই কাজের জন্য দাঁড় করাতে পারেন। তিনি যদি হেদায়াত দিতে চান, তাহলে মূর্তির মাধ্যমে হেদায়াত দিতে পারেন। এ সম্পর্কে একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা বর্ণনা করছি। পূর্ব মুজাফফর নগরের এক গ্রাম্য যুবক ফুলাতে এল। দেখতে মনে হচ্ছিল অনেক পুরনো মুসলিম। সে তার ভায়ের দিকে ইঙ্গিত করে বলল, তাকে কালেমা পড়িয়ে দিন। আমার ভাই মুসলমান হওয়ার জন্য এসেছে। আমি আশ্চর্যের সাথে জিজ্ঞেস করলাম আপনিও কি নও মুসলিম? হ্যাঁ বোধক উত্তর দিল। আমি বললামÑ কোন জিনিস আপনাকে ইসলামের দিকে প্রভাবিত করেছে? সে বলতে শুরু করলÑ আমি একজন কৃষক। গত বছর আখের বাজার ভালো ছিল। ফলে আমি নতুন একটি ঘর নির্মাণ করেছি। সেখানে ছোট করে একটি রুম তৈরি করেছি মূর্তি রাখার জন্য। মুজাফফর নগরে বাজার থেকে সুন্দর দেখে একটি মূর্তি ক্রয় করলাম। একটি খবরের কাগজে মূর্তিটি পেচিয়ে মূল বাজারের একটি মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে আমি হোঁচট খেলাম। মূর্তিটি আমার হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। এ ঘটনা দ্বারা আমার দৃষ্টি খুলে গেল। এই ভাঙ্গা শিবের মূর্তিকে লাথি মারলাম। বললাম তুই নিজেই নিজেকে হেফাজত করতে পারলি না, আমার উপকার করবি কিভাবে। আমার মন সাক্ষী দিলÑ মুসলমানদের ধর্মই সত্য। তাদের খোদা ভাঙ্গেও না ফাটেও না। বাস, একের বিশ্বাস করে নিচ্ছি। আমি অনিচ্ছায় মসজিদে ঢুকে গেলাম।
আমি ইমাম সাহেবকে বললাম, আমার তো বুঝে এসেছে, ধর্মতো মুসলমানেরটাই সত্য। আমাকে আপনি মুসলমান বানিয়ে দিন। ইমাম সাহেব ভয় পেয়ে গেলেন। আমি বললামÑ আপনি ভয় করবেন না, আমি ভালোভাবে বুঝে গেছি যে মুসলমানদের খোদাই সত্য। আমার পীড়াপিড়িতে তিনি আমাকে কালেমা পড়িয়ে দিয়েছেন। আমি আমার স্ত্রীকে বুঝিয়েছি, তারও বুঝে এসেছে। আরো একজন ভাইও ইসলাম গ্রহণ করেছে। এ হলো তৃতীয় নাম্বার ভাই যাকে আমি আপনার কাছে নিয়ে এসেছি। এটাই সত্য, তিনি যখন হেদায়াত দিতে চান, মূর্তিকে দিয়েই বলান যে, আমি ইবাদতের যোগ্য নই। পূজাও বন্দেগির উপযুক্ত শুধুমাত্র আল্লাহই। তাই দাওয়াত ও হেদায়াতের কাজের জন্য তিনি কারো মুখাপেক্ষি নয়। আমরাই মুখাপেক্ষি। দাওয়াতি কাজ করে তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। আমরা যদি না করি তাহলে আল্লাহর দ্বীনের কোনো ক্ষতি হবে না, আল্লাহ অন্য কোনো জাতিকে এই কাজের জন্য দাঁড় করিয়ে দিবেন। তাদের দ্বারা এই কাজ নিবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَاِنْ تَـتَـوَلَّـوْا يَـسْتَـبْدِلُ قَـوْمًا غَيْرَكُمْ ـ ثُـمَّ لَا يَـكُـوْانُـوْا اَمْـثَالَـكُـمْ
অর্থ : যদি তোমরা বিমুখ হও, তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলবর্তী করিবেন; তাহারা তোমাদের মত হইবে না।-সূরা মুহাম্মদ-৩৮
এটা জাতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত তো নয় ?
আপনি পত্র-পত্রিকা পড়–ন। পৃথিবী ভ্রমণ করুন। তাহলে আপনি দেখবেন দলে দলে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছে। বাবরী মসজিদ শহীদকারী মুসলমান হচ্ছে। বড় বড় দার্শনিক, খেলোয়ার, রাজকুমার, রাজকন্যা ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করছে। এটা তো খুবই আনন্দের বিষয়। কিন্তু এর উল্টো দিকটা যদি দেখা যায়, তাহলে দেখবেনÑ হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থান এবং উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মান্তর ছড়িয়ে পড়ছে। মুসলমানরা খ্রিস্টান হচ্ছে। শুধু দিল্লীতে অনেক মানুষ খ্রিস্টান হয়েছে। পুরো দেশে কত মানুষ কাদিয়ানী আর বাহায়ী হচ্ছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে মানুষ খুব দ্রুতবেগে খ্রিস্টান হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া, মালোয়শিয়াতেও অনেক মানুষ মুরতাদ হচ্ছে। দ্রুতগতিতে অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণ, আর মুসলমানদের মুরতাদ হয়ে যাওয়ার খবর মিলিয়ে দেখলে মন অস্থির হয়ে যায়। এমন তো নয় আল্লাহ তায়ালা তার অমুখাপেক্ষিতার শান দেখে জাতির পরিবর্তন করছেন (وَيَسْتَبْدِلْ قَوْماً)-এর প্রতীক তো বানাচ্ছেন না ?
দাওয়াতি কাজ ছেড়ে দেয়ার অপরাধে যদি এমনটি হয় তাহলে তা শতভাগ সঠিক এবং ইনসাফের কথাও তাই।
আপনি যদি কাউকে কিছু মূল্যবান জিনিস দিয়ে বলেন, এগুলো যেন তার প্রাপ্ত লোকদের কাছে বণ্টন করে দেয়। কিন্তু এই মূল্যবান বস্তুগুলো যদি মানুষের কাছে না পৌঁছায়, নিজের কাছে কুক্ষিগত করে রাখে তাহলে সেই বস্তুগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। আসল অবস্থায় থাকবে না। তখন অপারগ হয়ে আপনি তার থেকে ওই বস্তু ফেরত নিয়ে নিবেন এবং তা অন্য এমন কাউকে দিবেন, যে এই বস্তুটি সঠিকভাবে পরিবেশন করবে। সুন্দরভাবে মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দিবে। আপনার বাসনা পূর্ণ করতে পারবে।
আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
اِنَّمَا اَنَا قَاسِمٌ وَاللهٌ يُعْطِيْ
অর্থ: আমিতো বণ্টনকারী, আর আল্লাহ হলেন দাতা। তিনি একথা বলেননি, আমি জমাকারী এবং আমি হলাম মালিক। বরং তিনি বলেছেন, আমি বণ্টনকারী। বণ্টনকারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রত্যেক অনুসারী এবং নবীর ওয়ারিসদের জন্য জরুরি, তারা যেন প্রত্যেকেই বণ্টনের হক আদায় করে।
কিন্তু আফসোসের বিষয়, যেখানে আমরা অন্যের কাছে বণ্টন করব, পৌঁছানোর ব্যবস্থা করব সেখানে আমরা নিজের রূপ পরিবর্তন করে ফেলেছি। কিছু নিয়ম-নীতির নাম রেখে দিয়েছি ইসলাম। দুনিয়ার মানুষ কি জানে কুরআন হাদিসের ইসলাম কী ? তারা তো মুসলমানদের বাস্তব জীবনকে ইসলাম মনে করে।
আমাদের মেজাজ
আমাদের মেজাজটাই এমন হয়ে গেছে যে, ইসলামের যেই জিনিসটা আমাদের সামাজিক কৃষ্টি-কালচারের সাথে এবং মনের সাথে মিলে সেটাকে মানি বা গ্রহণ করি। আর যেই জিনিস আমাদের মন আর সামাজিক নিয়ম-নীতির সাথে সাংঘর্ষিক অথবা যার উপর আমল করা কঠিন, চাই সেটা ইসলামের যতই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হোক না কেন বাস্তব জীবনে তা থেকে আমরা অনেক দূরে থাকি। পক্ষান্তরে আমাদের থেকে দ্বীনের চাওয়া হলো Ñ
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آَمَنُوا ادْخُلُوْا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّه لَـكُمْ عَدُوٌّ مُبِيْنٌ .
হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চিতরূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্র“।-বাকারা -২০৮
দ্বীনের কিছু জিনিসকে মানা, আর কিছু জিনিসকে অস্বীকার করা পবিত্র ইসলাম ধর্মের মেজাজের পরিপন্থি। এটা তো ইহুদিদের মেজাজ। এ বিষয়ে কুরআন দুনিয়া ও আখেরাতে লাঞ্ছনার কথা শুনিয়েছে। ইহুদিদের উদ্দেশ্য করে কুরআন একথা বলেছে কিন্তু আজ মুসলমানরা এর মুখাতাব হয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ তাআলা বলেনÑ
أَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاءُ مَنْ يَفْعَلُ ذٰلِكَ مِنْكُمْ إِلَّا خِزْيٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ إِلٰى أَشَدِّ الْعَذَابِ وَمَا اللّٰهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُوْنَ .
অর্থ: তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিয়দাংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দাংশ অবিশ্বাস কর! যারা এরূপ করে, পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ্ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন।
-সূরা বাকারা-৮৫
এই মেজাজের শাস্তি হলো দুনিয়া ও আখেরাতের অপমান। কিছু কথা মানা আর কিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া, আবার দ্বীনের হুকুম ও শব্দাবলীকে নিজের মনমতো ব্যবহার করা এটা হলো ইহুদিদের মেজাজ। এব্যাপারে ইঙ্গিত করে কুরআন বলেÑ
فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِيْثَاقَهُمْ لَعَنَّاهُمْ وَجَعَلْنَا قُلُوبَهُمْ قَاسِيَةً يُحَرِّفُوْنَ الْكَلِمَ عَنْ مَوَاضِعِهِ وَنَسُوْا حَظًّا مِمَّا ذُكِّرُوْا بِه وَلَا تَزَالُ تَطَّلِـعُ عَلٰى خَائِنَةٍ مِنْهُمْ إِلَّا قَلِيْلًا مِنْهُمْ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاصْفَحْ إِنَّ اللّٰهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ.
অর্থ: অতএব, তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের দরুন আমি তাদের উপর অভিসম্পাত করেছি এবং তাদের অন্তরকে কঠোর করে দিয়েছি। তারা কালামকে তার স্থান থেকে বিচ্যুত করে দেয় এবং তদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তা থেকে উপকার লাভ করার বিষয়টি বিস্মৃতি হয়েছে। আপনি সর্বদা তাদের কোনো না কোনো প্রতারণা সম্পর্কে অবগত হতে থাকেন, তাদের অল্প কয়েকজন ছাড়া। অতএব, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং মার্জনা করুন। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালোবাসেন।
-সূরা মায়েদা -১৩
ইসলামের সকল পরিভাষা ও বিধানাবলী এই দৃষ্টিতে বুঝে আমল করতে হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংস্পর্শে থেকে যেই ভাবে বুঝে ও আমল করেছেন ইসলামের প্রথম জামাত সাহাবায়ে কেরাম। ইসলামকে সব ধরনের বিকৃতি থেকে নিরাপদ রাখা খুবই জরুরি। আমরা যদি এর খেয়াল না রাখি, তাহলে অধিকাংশ সুযোগ সন্ধানী এবং সহজ পছন্দের কারণে। আমরাও يحرفون الكم عن مواضعه এর অভিশাপের আওতায় পড়ে যাব। নিজের ইচ্ছা ও মেজাজ অনুযায়ী যদি দ্বীনের বিধানাবলী ও পরিভাষা ব্যবহার করি তাহলে সেটা আর থাকবে না। বরং একটি নতুন ধর্মে পরিণত হয়ে যাবে। ইসলামকে এমন দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝতে হবে যেভাবে সাহাবায়ে কেরাম ও প্রথম যুগের মানুষগণ বুঝেছেন। এর উপর ঐভাবে আমল করে দ্বীনকে বিকৃতির হাত থেকে বাঁচানো কতটা প্রয়োজন, তা একটি উদাহরণ দ্বারা বুঝে আসবে।
উদাহরণ স্বরূপ একটি শব্দ ‘মেরেছে’ এই শব্দটা কয়েক ভাবে ব্যবহার করা হয়। একজন সৈনিক যুদ্ধের ময়দানে অন্য এক সৈনিককে মেরেছে। অপর দিকে মা তার সন্তানকে মেরেছে। এই দুই কথার মধ্যে বর্ণনার ব্যবধান যথেষ্ট রয়েছে। এখন যদি মা’র মারা শব্দটিকে যুদ্ধের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় তাহলে কী ধরনের ভুল হবে? এমনভাবে দাওয়াত, জিহাদ, শাহাদাত, ভ্রাতৃত্ব, নুসরাত ইত্যাদি ইসলামের পরিভাষাগুলো স্বস্থানে বিদ্যমান রাখার জন্য এর উপর আমল করা খুবই জরুরি। ইসলামের আমলের বিষয় কুরআন সুন্নাহ ও সীরাত থেকে সরাসরি বুঝে তার উপর আমল করার চেষ্টা করা। সাথে সাথে সরাসরি সীরাত থেকে উপকৃত হওয়ার যোগ্যতা তৈরি করা।
মূল হযরত মাওলানা কালিম সিদ্দিকী দা.বা.
অনুবাদ. যুবায়ের আহমদ
Copyright © 2017 - Jubaerahmad.com - All Rights Reserved